ঈদে কক্সবাজারে পাকা ঘর ও জমি পাচ্ছেন ৮৬৭ পরিবার

মুহিবুল্লাহ মুহিব •

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামের মৃত মো. হোসেনের মেয়ে রেনুয়ারা বেগম। জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রেনুয়ারা বেগম প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার পাকা ঘরে বসে মনের আনন্দে কাজ করছিলেন। প্রতিবন্ধি হওয়ার পরেও অনেক গোছানো তার ঘরটি। ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর এমন উপহার পেয়ে আনন্দে আবেগ-আপ্লুত রেনুয়ারা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার ”জমি নাই ঘর নাই” প্রকল্পের আওতায় জমিসহ ঘর পেয়ে অনেকের জীবন বদলে গেছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে কক্সবাজারে ভুমিহীন গৃহহীন ৪ হাজার ৭৭২ পরিবারকে দেওয়া হবে ভুমিসহ গৃহ। তৃতীয় পর্যায়ে এসে জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মানসম্মত নান্দনিক পাকা ঘর পেয়েছেন রেনুসহ আরও ৮৬৭ পরিবার।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রেনুয়ারা বেগমের বসবাস এখন একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘোনায় প্রধানমন্ত্রীর পাওয়া ঘরে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জমিসহ ঘর পাওয়ায় ৩৮ বছর বয়সে এসে বিয়েও হয়েছে তার। প্রধানমন্ত্রী থেকে পাওয়া ঘরে স্বামীকে নিয়ে সুখে সংসার করছেন এই প্রতিবন্ধি নারী।

বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় বদলে গেছে রেনুয়ারার মতো অনেকের জীবন। জীবন বদলের এমন অসংখ্য গল্প রচিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই তার।

আবেগ আল্পুত রেনুয়ারা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। মা-বাবার ঘরবাড়ি না থাকায় বিয়েও হচ্ছিল না। বড় কষ্টে দিন কাটছিল। পাকা বাড়ি পাবো কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। আজ সেই ‘স্বপ্ননীড়ে’ বসবাস করছি প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায়।

তিনি আরও বলেন, নতুন থাকার ঘর, রান্না ঘর টয়লেট সহ পানির সুবিধাও রয়েছে। অত্যন্ত যত্ন সহকারে পাকাবাড়িটি নির্মাণ করেছেন। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ স্যার ও ইউএনও মিল্টন রায় স্যার। বাড়ি নির্মাণের সময় তারা দুইজনই সার্বিক তদারকি করেছেন। আমাদের মানসম্মত বাড়ি উপহার দিয়েছেন।

রেনুর মতো জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হাফেজ জয়নাল আবেদীন। ২৫ বছরের জয়নালের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। পৈত্রিক জমি না থাকায় পরের জায়গায় ছোট্ট একটি ঘরে এলাকাবাসীর সহযোগীতা এবং বেসরকারী নুরানী মাদ্রাসায় তিন হাজার টাকা বেতনে চাকরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই চাকরীটাও করোনাকালে চলে গেলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছিলেন জয়নাল। সে খবর পৌছে গেছে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের কাছে। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তার খোঁজ-খবর নিয়ে বাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে সেই বাড়িতে উঠেছে জয়নালের পরিবার। এখন তারা খুবই আনন্দিত।

জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হাফেজ জয়নাল আবেদীন বলেন, আগে ঝুপরি ঘরে থাকতাম। এখন পাকাবাড়ি পেয়েছি। ঘরগুলোও মানসম্মত। কয়েকমাস ধরে বসাবস করছি, কোন অসুবিধা হয়নি। রান্না ঘর ও টয়লেট সেই সাথে বিদ্যুত সংযোগও পেয়েছি। এ যেন স্বপ্নের মত। সঙ্গে ৮ হাজার টাকা বেতনের চাকরীও করি আর স্ত্রী বাড়ি পাশে সবজি চাষ করে আমাদের সংসার ভালই চলছে। এসবের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসককে কৃতজ্ঞতা জানাতে বিন্দুমাত্র ভুলেননি জয়নাল। জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয় না হলে এসব কখনো সম্ভব হতো না বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে গৃহ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উক্ত প্রকল্পের অধীনে সদর উপজেলায় তৃতীয়ধাপে আগামী ২৬ এপ্রিল ১০৩ পরিবারের মাঝে এ উপহার তুলে দেবেন। যার জন্য আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি।

আর জেলা প্রশাসক মো. মামুুনুর রশীদ বলেন, কক্সবাজার সদরসহ ৯ উপজেলায় তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৮৬৭ পরিবারকে জমি ও পাকা ঘর তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৬ এপ্রিল এসব ঘরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়ালী অনুষ্ঠানে যোগ দেবে স্ব স্ব উপজেলার কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরা। নতুন থাকার ঘর, রান্না ঘর টয়লেট সহ পানির সুবিধা রেখে অত্যন্ত যত্নসহকারে এসব বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

আগামী ২৬ এপ্রিল উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১০৩, চকরিয়ায় ২১০, পেকুয়ায় ৪০, রামুতে ২০০, মহেশখালীতে ৩৫, উখিয়াতে ২২০, টেকনাফে ৪০, কুতুবদিয়ায় ১৯ টি ঘর।

এছাড়া, কক্সবাজার জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৪২৫ জন এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১৪৬৩ জন ভূমিহীন গৃহহীন কে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দেওয়া হবে। সব মিলে কক্সবাজার জেলায় ৪ হাজার ৭৭২ জন ভূমি গৃহহীনের মাঝে জমিসহ ঘর দেওয়া হবে।